কোন এক আজগর
মাহফুজা আরা পলক
গায়ে প্রচন্ড ব্যথা নিয়ে আজগর আজ বাড়ি ফিরছে। তখন প্রায় মাঝরাত।শেষ ট্রেন টার জন্য অপেক্ষা করে তবে সে আজ বাড়ি ফিরল।আর কয়েক দিন পরেই ঈদ।তার খুব ইচ্ছে ছেলেটাকে একটা নতুন শার্ট আর বউকে একটা লাল টুকটুকে তাঁতের শাড়ি কিনে দিবে। তাই তার একটু বাড়তি চেষ্টা। পরিশ্রম একটু হলে হোক। নিজের জন্য চাওয়া পাওয়া নেই তবে ওদেরকে দিতে পারলেই তার পাওয়া হয়ে যাবে।
পরিবারের প্রতি তার খুব মায়া।বিশেষ করে তার ছোট্ট বাপ জানাটার জন্য মন উজার করে কিছু করতে ইচ্ছে করে। তার পুটুলিতে আজ জিলিপী আছে। ছেলেটা খুব খেতে পছন্দ করে।ছেলেটার বয়স পাঁচ বছর হয়ে গেছে। খুব বুঝে কথা বলে। মনে মনে আজগর স্বপ্ন দেখে ছেলেকে অনেক বিদ্বান বানাবে। হাতে ক্ষীণ আলোর একটি টর্চ লাইট। এসব চিন্তা করতে করতে সে কখন যে বাড়ির আঙ্গিনায় এসে দাঁড়িয়েছে বুঝতেই পারেনি। হ্যারিকেন হাতে তার বৌ ঘরের দাওয়ায় অপেক্ষারত আর ঠিক পাশেই অন্তু এখনো জেগে দাঁড়িয়ে আছে। বাবাকে ছাড়া যে তার ঘুম আসেনা।
জিলিপীর পুটুলিটা ছেলের হাতে দিতেই মহা খুশি হলো সে।নাজু তার জন্য ভাত বেড়ে রেখেছে। হাত মুখ ধুয়ে আজগর যখন খেতে বসলো, ভাতে হাত দিয়েই উঞ্চতা অনুভব করলো। মায়ায় তার চোখে পানি চলে এল।এত রাতে কষ্ট করে রেঁধেছে গরম গরম খাওয়াবে বলে। দুজনের মুখে রোজ ভাতের লোকমা তুলে দিয়ে তবেই সে ভাত খায়।আজও তাই করলো। সে বললো বৌ একটু রসুন তেল গরম করে মালিশ দাওনাগো।তৈরীই ছিল রশুন তেলের বাটি,তা হ্যারিকেন এর উপর বসিয়ে ভাত বেড়ে খাওয়াতে লাগলো নাজু।অন্তু খুব বায়না ধরলো -বাবা কাল আমি তোমার সঙ্গে যাব।আজগর বললো -এত ভদ্রলোকের মাঝে তোকে নেই কী করে? তোরযে একখানাও ভালো জামা নেই।
ঈদে কিনে দিলে পরে কোন একদিন যাবি।তবু্ও ছেলে বায়না ছাড়ে না। পরদিন অনেক সেলাই করা একটি শার্ট নাজু তার ছেলেকে পরিয়ে তেল দিয়ে চুল আঁচড়ে বাবার সঙ্গে যেতে দিল।যথারীতি হুইসেল এর শব্দের সাথে ট্রেন আসলো স্টেশনে। হকার আর যাত্রীর পদচারণায় গমগম হয়ে উঠলো স্টেশনটা।অন্তু অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখছিল সব।এমন সময় একজন স্যুট বুট পড়া ভদ্রলোক আজগরকে ডাকদিল।এই কুলি। আজগর এগিয়ে গিয়ে দুইটি লাগেজের সাথে আরো বোনাস দুইটি কাপড়ের ব্যাগ মাথায় ও কাঁধে নিয়ে ছেলেকে বললো চল বাবা,এই বলে হাঁটতে শুরু করলো। হঠাৎ ধাওয়া খেয়ে এক চোর দৌড়ে ঠিক আজগরকে ধাক্কা দিয়ে ছুটে চলে গেল। পিছনে অনেক লোকজন আসছিল। অমনি মাথা থেকে একটা লাগেজ গেল পড়ে।
ভদ্রলোক ব্যক্তিটি ধমকে আজগরের গালে বসিয়ে দিল এক থাপ্পড়, সেই সাথে দামী বুটের দু’একটা লাথি। এই বেটা দেখে চলতে পারিস না?আমার এত দামী লাগেজটাকে কী করলি? আজগর গুঙিয়ে উঠলো। পড়ে থাকা বাবাকে ধরে ভয়ে অন্তু স্যুট বুট পড়া ভদ্রলোক নামক প্রাণীটির দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। চোখের সামনে তার রসুন তেলের বাটিটা ভেসে উঠলো।